আগামী মাসে কিংবা যত শিগগির সম্ভব’ কাঠের তক্তা, গাড়ি, আধা বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ (সেমিকন্ডাক্টর), ফার্মাসিউটিক্যালস–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার এ কথা জানিয়েছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মায়ামিতে এক সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘আমি গাড়ি, আধা বিদ্যুৎ পরিবাহী পণ্য, চিপ, ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য, ওষুধ, কাঠের তক্তাজাতীয় পণ্যে শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছি।’
আগামী মাসে কিংবা যত শিগগির সম্ভব আরও বেশ কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেবেন বলেও জানান তিনি।
ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। এরপর থেকেই তিনি বহু আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। ঘন ঘন আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকিও দিয়ে আসছেন তিনি।
যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্পের হুমকিও বদলেছে। এরপর কী আসতে চলেছে, সেটা নিয়ে অন্যান্য দেশ ও ব্যবসাগুলো অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের অনেকেই সতর্ক করে বলছেন, ট্রাম্পের ব্যাপক হারে শুল্কারোপ মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে।
এর আগে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার কথা ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নেবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, এই শুল্ক আরোপের বিষয়ে তিনি সোমবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন।
এর ফলে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা (আমদানি) সব ইস্পাতের ও অ্যালুমিনিয়ামের ক্ষেত্রে এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে বলে জানান ট্রাম্প।
ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি এ ছাড়া চীনের পণ্য আমদানিতে ১০ শুল্ক আরোপের আদেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প এ-সংক্রান্ত তিনটি পৃথক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা, মেক্সিকো ও চীন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাউম পৃথকভাবে পাল্টা ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি চীনের দিক থেকেও একই ধরনের ঘোষণা এসেছে।
তবে পরে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে শুল্ক আরোপ এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। যেখানে প্রতিবেশী এই দেশ দুটি অবৈধ অভিবাসী ও মাদক পাচার ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় আসার পর এ সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেনবাউম শুল্ক কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ করেন। এই আলাপের পর শুল্ক আরোপ স্থগিতের বিষয়ে তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়।
ট্রাম্পের আগের দাবি ছিল, দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল মাদকের প্রবাহ ঠেকাতে তারা যেন ব্যবস্থা নেয়। কানাডা ও মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের ঢল বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পদক্ষেপের কারণে এমন এক বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং মূল্যস্ফীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
এদিকে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনুরূপ পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ কথা বলেছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পদক্ষেপে চীন ভীষণ অসন্তুষ্ট। তারা দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করে। এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মনীতির গুরুতর লঙ্ঘন। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনুরূপ পাল্টা ব্যবস্থা নেবে চীন।