২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকল নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে প্রথমবার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি মাঠে গড়াল। ম্যাচটি অবশ্য দুদলের ক্রিকেটাররা অনেকটা মজা হিসেবে নিয়েছিলেন। কিউই ক্রিকেটারদের অনেকে নকল গোঁফ, চুল নিয়েও মাঠে নেমেছিলেন। তবে ক্রিকেটের এই ফরম্যাটই যে ভবিষ্যতে সবচেয়ে বড় ধামাকা হতে চলেছে, সেটা হয়তো তখন কেউই বুঝতে পারেননি।
আইসিসি এরপর ধীরে ধীরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোতে একটি-দুটি করে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ রাখতে শুরু করে। তবে অল্প দিনেই টেস্ট ও ওয়ানডের পর সমর্থকদের মনে ফরম্যাটটি জায়গা করে নেয়। তাই ২ বছরের মাথায় টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সংস্থাটি।
১২ দল নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় যাত্রা শুরু হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। মোট ২৭ ম্যাচের এই আসরে ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। আসরের প্রায় প্রতিটি ম্যাচই জমে ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের যৌথ আয়োজনে আগামী ১ জুন পর্দা উঠবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের। যেটি হতে চলেছে এ যাবৎ সবচয়ে বড় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সবচেয়ে বেশি দলের অংশগ্রহণ ও সবচেয়ে বেশি ম্যাচ সংখ্যার রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে টুর্নামেন্টটি।
এরপর আইসিসি ২০০৯, ২০১০ ও ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা আসরের ফরম্যাটেই বিশ্বকাপ আয়োজন করে। অথার্ৎ ১২ দলের অংশগ্রহণে ২৭ ম্যাচে। যেখানে ২০০৯ সালের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। আর ফাইনালে শ্রীলংকাকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে গত আসরের রানারআপ পাকিস্তান। ২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে স্বাগতিক দেশ হয়। সেবার অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। আর ২০১২ সালে শ্রীলংকা বিশ্বকাপের আয়োজক হয়। তবে স্বাগতিক লংকানদের ফাইনালে কাঁদিয়ে ট্রফিতে চুমু দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক স্বত্ত্ব পায় বাংলাদেশ। আর এবারই আইসিসি ১২ দল থেকে ১৬ দলের আসর শুরু করে। যেখানে ম্যাচও বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫-এ। এই আসরে আগেরবারের রানারআপ শ্রীলংকা চ্যাম্পিয়নের স্বাদ পায়। ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জেতে দলটি। ২০১৪ ও ২০১৬ বিশ্বকাপ একই ফরম্যাটে গড়ায়। যেখানে ভারতের আয়োজনে পরের আসরটিতেও ১৬ দল ও ৩৫ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ভারত আসরে স্বাগতিকদের কাঁদিয়ে প্রথম দল হিসেবে দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আইসিসি এরপর ৪ বছর পর ২০২১ সালে ফের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করে। এবার আয়োজকের দায়িত্ব পায় যৌথভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান। যদিও ওমান শুধুমাত্র আসরের বাছাইয়ের ম্যাচগুলো আয়োজন করে। এই আসরে ১৬ দল থাকলেও ম্যাচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫টিতে। ফাইনালে প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরে অস্ট্রেলিয়া। ২০২২ সালে পরের আসরের দায়িত্ব পায় গতবারের শিরোপা জেতা অস্ট্রেলিয়া। এবারও গতবারের মতো ১৬ দলের অংশগ্রহণে ৪৫টি ম্যাচ মাঠে গড়ায়। এবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে দ্বিতীয়বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতে ইংল্যান্ড।
২০১০ সালের পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে বিশ্বায়নের কথা মাথায় রেখে ও যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট উন্নত করতে মার্কিন দেশটিকে যৌথ আয়োজক করা হয়। এবারই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রথমবার ২০ দল নিয়ে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে ম্যাচ সংখ্যা হবে ৫৫টি।
এই বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে আইসিসিও এবার প্রায় সবকটি মহাদেশের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেছে। আসরটিতে আয়োজক হিসেবে সরাসরি খেলবে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গত আসরের শীর্ষ ৮ দল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলংকা। টি-টোয়েন্টি র্যাংকিং বিচারে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান সুযোগ পেয়েছে।
ইউরোপের বাছাইপর্ব থেকে উঠে এসেছে আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড। ইস্ট এশিয়া-প্যাসিফিক বাছাই থেকে জায়গা পেয়েছে পাপুয়া নিউগিনি। আমেরিকাস বাছাই থেকে কানাডা বিশ্বকাপ খেলবে। এশিয়া বাছাই থেকে নেপাল ও ওমান সুযোগ পেয়েছে। আর আফ্রিকা মহাদেশ থেকে নামিবিয়া ও উগান্ডা খেলবে।
এবারের বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের মিলিয়ে মোট ৯টি ভেন্যুতে খেলা গড়াবে। যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬টি ও যুক্তরাষ্ট্রের ৩টি স্টেডিয়ামে আসরটি অনুষ্ঠিত হবে। উইন্ডিজের ভেন্যুগুলো হলো অ্যান্টিগা এন্ড বারবুডার নর্থ সাউন্ড, বার্বাডোজের ব্রিজটাউন, গায়ানার প্রোভিডেন্স, সেইন্ট লুসিয়ার গ্রস ইসলেট, সেইন্ট ভিনসেন্ট এন্ড দ্য গ্রেনাডিয়ান্সের কিংসটাউন ও ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সান ফার্নান্দো। যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্যুগুলো হলো, লড়ারহিল ফ্লোরিডা, ইস্ট মেয়াডো নিউইয়র্ক ও টেক্সাসের গ্র্যান্ড প্রাইরে। ২৯ জুন বার্বাডোজে ফাইনালের মধ্যদিয়ে আসরের পর্দা নামবে