ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি প্রাইজমানির বিশ্বকাপের পর্দা উঠল

news-banner

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ আয়োজনে ১ জুন থেকে পর্দা উঠেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের। ২০ দলের অংশগ্রহণে এটিই এ যাবৎ সবচয়ে বড় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টুর্নামেন্ট। সবচেয়ে বেশি দলের অংশগ্রহণ ও সবচেয়ে বেশি ম্যাচ সংখ্যার রেকর্ডও গড়েছে আসরটি। এছাড়া এবারের আসরেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রাইজমানির ঘোষণা দিয়েছে আইসিসি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০১০ সালের পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করছে। তবে বিশ্বায়নের কথা মাথায় রেখে ও যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট উন্নত করতে মার্কিন দেশটিকে যৌথ আয়োজক করা হয়। যা আইসিসির সহযোগী প্রথম কোনো দেশ হিসেবেও বিশ্বকাপ আয়োজনের রেকর্ড গড়ল যুক্তরাষ্ট্র।

সবচেয়ে বেশি দল ও ম্যাচের রেকর্ড

এবারই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রথমবার ২০ দল নিয়ে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যেখানে ম্যাচ সংখ্যা হবে মোট ৫৫টি। ২৯ জুন বার্বাডোজে ফাইনালের মধ্যদিয়ে আসরের পর্দা নামবে।

বিশ্বকাপ দলের বাছাইপর্ব

এই বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে আইসিসি এবার প্রায় সবকটি মহাদেশের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেছে। আসরটিতে আয়োজক হিসেবে সরাসরি খেলছে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গত আসরের শীর্ষ ৮ দল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলংকা। টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিং বিচারে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান সুযোগ পেয়েছে।

ইউরোপের বাছাইপর্ব থেকে উঠে এসেছে আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড। ইস্ট এশিয়া-প্যাসিফিক বাছাই থেকে জায়গা পেয়েছে পাপুয়া নিউগিনি। আমেরিকাস বাছাই থেকে কানাডা বিশ্বকাপ খেলছে। এশিয়া বাছাই থেকে নেপাল ও ওমান সুযোগ পেয়েছে। আর আফ্রিকা মহাদেশ থেকে নামিবিয়া ও উগান্ডা খেলছে।

আসরের ভেন্যু

এবারের বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের মিলিয়ে মোট ৯টি ভেন্যুতে খেলা গড়াবে। যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬টি ও যুক্তরাষ্ট্রের ৩টি স্টেডিয়ামে আসরটি অনুষ্ঠিত হবে। উইন্ডিজের ভেন্যুগুলো হলো অ্যান্টিগা এন্ড বারবুডার নর্থ সাউন্ড, বার্বাডোজের ব্রিজটাউন, গায়ানার প্রোভিডেন্স, সেইন্ট লুসিয়ার গ্রস ইসলেট, সেইন্ট ভিনসেন্ট এন্ড দ্য গ্রেনাডিয়ান্সের কিংসটাউন ও ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সান ফার্নান্দো। যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্যুগুলো হলো, লড়ারহিল ফ্লোরিডা, ইস্ট মেয়াডো নিউইয়র্ক ও টেক্সাসের গ্র্যান্ড প্রাইরে।

রেকর্ড প্রাইজমানি

আসরটিতে মোট প্রাইজমানি ১ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। টুর্নামেন্টের ১৭ বছরের ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ প্রাইজমানি। যেখানে শিরোপাধারী দল পাবে ২৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২৮ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা)। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে চ্যাম্পিয়ন দল এবারই সবচেয়ে বেশি প্রাইজমানি পাবে।

প্রাইজমানি হিসেবে রানার্সআপ দল পাবে ১২ লাখ ৮০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা)। এছাড়া সেমিফাইনালে হেরে যাওয়া দলগুলোর প্রত্যেকে পাবে ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ ডলার করে। আর সুপার এইট থেকে বাদ পড়া চার দলের প্রত্যেকে প্রাইজমানি হিসেবে পাবে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ ডলার করে।

২০টি দল চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলছে, প্রতিটি গ্রুপে রয়েছে ৫টি করে দল এবং প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুই দল খেলবে সুপার এইটে। অর্থাৎ, ২০ দলের মধ্যে সেরা ৮টি দল সুপার এইটে ওঠার পর বাকি থাকে আরও ১২টি দল। সুপার এইটে ওঠা ৮টি দলের পর পারফরম্যান্স অনুযায়ী নির্ধারিত হবে ৯ম থেকে ২০তম দল। এর মধ্যে ৯ম, ১০ম, ১১তম ও ১২তম দলের প্রত্যেকে পাবে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ ডলার করে।১৩তম থেকে ২০তম দলগুলোর প্রত্যেকে ২ লাখ ২৫ হাজার ডলার করে পাবে।

প্রতিটি ম্যাচ জয়ের জন্য অতিরিক্ত ৩১ হাজার ১৫৪ ডলার করে পাবে দলগুলো। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল জয় এখানে বিবেচিত হবে না। তবে আসরে কোনো ম্যাচ না জিতলেও বড় অংক নিয়ে দেশে ফিরতে পারবে দলগুলো। এই হিসেবে প্রাইজমানি দলগুলো পাবে ২ লাখ ২৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা)।

৪টি পুরনো রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে

# ব্যক্তিগত সবচেয়ে বেশি চার

বর্তমানে এই রেকর্ডটি রয়েছে শ্রীলংকার সাবেক ক্রিকেটার মাহেলা জয়বর্ধনের। তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১১১টি চার মেরেছেন। তবে সামান্য পেছনেই রয়েছেন বিরাট কোহলি। তিনি ১০৩টি চার মেরেছেন। আর মাত্র ৯টি চার মারলেই জয়বর্ধনেকে টপকে যাবেন কোহলি। তার পেছনে রয়েছেন রোহিত শর্মা (৯১) এবং ডেভিড ওয়ার্নার (৮৬)।

# একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান

এবার প্রতিটি দলকেই আগের থেকে বেশি ম্যাচ খেলতে হবে। দলের সংখ্যাও বেড়ে ১৬ থেকে হয়েছে ২০টি। তাই একজন ব্যাটারের কাছে সুযোগ থাকবে বেশি ইনিংস খেলার। ফলে একটি বিশ্বকাপে সর্বাধিক রানের নজির দেখা যেতে পারে এ বার। এখনও পর্যন্ত ২০১৪ বিশ্বকাপে কোহলির করা ৩১৯ রান সবার উপরে রয়েছে।

# দলীয় রেকর্ডের হাতছানি অস্ট্রেলিয়ার

আইসিসির সব প্রতিযোগিতা আজ পর্যন্ত কোনও দল একসঙ্গে জিততে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার সামনে সেই নজির রয়েছে। তারা গত বছর আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও জিতলে নতুন নজির তৈরি করবে তারা।

# সবচেয়ে বেশি ক্যাচ

এবারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ক্যাচের রেকর্ডও ভেঙে যেতে পারে। ২৩টি ক্যাচ নিয়ে এবি ডিভিলিয়ার্স সবার ওপরে রয়েছেন। ১৯টি ক্যাচ রয়েছে মার্টিন গাপটিলের। দুজনেই এখন সাবেক। এরপরে রয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার (২১), রোহিত শর্মা এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (১৬টি করে)। ফলে এই নজির এ বার ভেঙে যেতে পারে।

সবচেয়ে বয়সী দল ওমান, সবচেয়ে কম নেপাল

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সী দলটির নাম ওমান। মধ্যপ্রাচ্যের দলটির খেলোয়াড়দের গড় বয়স ৩২.৮৭ বছর। এই দলের ১৫ জনের মাত্র দুজনের বয়সই ৩০–এর কম। উইকেটকিপার নাসিম খুশি ও অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নাদিম দুজনের বয়সই ৪১। তবে সবচেয়ে কম বয়সী দল নেপাল। ২০১৪ সালের পর আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া দলটির স্কোয়াডের গড় বয়স ২৩.৬০ বছর। তাদের ৩০ ছাড়ানো খেলোয়াড় মাত্র একজন।

বাংলাদেশের গড় বয়স ২৭.২৭। কিন্তু আসরের সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড়ের উগান্ডার ফ্র্যাঙ্ক এনসুবুগা। বাঁহাতি এই স্পিনারের বয়স বিশ্বকাপ শুরুর দিন ৪৩ বছর ২৭৮ দিন। আর আসরের সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় নেপালের গুলশান ঝা। বিশ্বকাপ শুরুর দিন এই অলরাউন্ডারের বয়স ১৮ বছর ১০৫ দিন।

সব বিশ্বকাপ খেলা মাত্র দুজন

নবম বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান ও ভারতের রোহিত শর্মা। তারা দুজনই ২০০৭ সালে শুরু হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা আসরে খেলেছেন। এরপর প্রতিটি আসরেই তাদের পাওয়া গেছে।

আয়ারল্যান্ড টি-টোয়েন্টি অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে এগিয়ে

১০০-র বেশি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে আয়ারল্যান্ডের তিনজনের। পল স্টার্লিংয়ের সর্বোচ্চ ১৪২ ম্যাচ। এই দলটির খেলোয়াড়েরা গড়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ৬৬টি। এই রেকর্ডে আইরিশদের উল্টোপিঠেই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের। বিশ্বকাপের সহ–আয়োজক দলটি খেলোয়াড়েরা গড়ে ম্যাচ খেলেছেন ১২টি করে।

রান ও সেঞ্চুরিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ভারতীয় ব্যাটাররা

এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান ও সেঞ্চুরি নিয়ে খেলতে গেছে ভারত। তাদের সবার মিলিয়ে রান ১৪৫৮১, আর সেঞ্চুরি ১১টি। তালিকার তলানির দল যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যানদের সম্মিলিত রানের চেয়ে প্রায় ১২ হাজার রান বেশি ভারতীয়দের।

নিউজিল্যান্ড উইকেট শিকারে এগিয়ে

নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ দলের তিন বোলার টিম সাউদি, ইশ সোধি ও মিচেল স্যান্টনারের উইকেট ১০০-র বেশি। ১৫৭ উইকেট নেওয়া পেসার সাউদিও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী আয়ারল্যান্ডের চেয়ে ১০৩টি উইকেট বেশি কিউইদের।

সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিগত রান

ভারতের তারকা বিরাট কোহলির অধীনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান রয়েছে। এখন পর্যন্ত ক্রিকেটের এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে তিনি করেছেন, এক হাজার ১৪১ রান। এই বিশ্বকাপেও খেলছেন তিনি। নিঃসন্দেহে এই সংখ্যাটাকে এবার আরও বাড়ি নেবেন তিনি। কোহলির পর এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে বেশি রান করেছেন শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনে, ক্রিস গেইল ও রোহিত শর্মা।

সবচেয়ে বেশি উইকেট

এই তালিকায় সবচেয়ে প্রথম নামটি বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের। আগের ৮ বিশ্বকাপ খেলে ৪৭ টি উইকেট নিয়েছেন দেশসেরা অলরাউন্ডার। এবার এই সংখ্যাটা আরও বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। দ্বিতীয় স্থানে আছেন সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি (৩৯) এবং শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা (৩৮)।