বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ–পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনের প্লাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বুধবার রাতে ফেসবুক পোস্টে নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিদেশে কারা বিক্ষোভ করেছে জানতে খোঁজ নিচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। এসব তথ্য জানতে এরইমধ্যে বাংলাদেশের মিশনগুলোয় চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ–নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে গত ১৬ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২০৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, নাহিদ ইসলাম ও আবু বাকের মজুমদারকে ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাদাপোশাকের এক দল ব্যক্তি তাদের তুলে নিয়ে যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এনিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত পাঁচজন সমন্বয়ক ডিবির হেফাজতে রয়েছে।
নতুন তিন দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরই মধ্যে পাঁচ সমন্বয়ক ডিবি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে থাকা অবস্থায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের একটি ভিডিও বার্তায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেছেন। এসময় নাহিদের পাশে ছিলেন ডিবি হেফাজতে থাকা কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও পাঁচ সমন্বয়ক।
ঢাকাসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় রাজধানীর কয়েকটি স্থানে শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা এবং পুলিশ লাঠিচার্জের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় বেশকিছু শিক্ষার্থীকে আটক কররে পুলিশ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হেফাজতে ছিল।
শুক্রবারও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তাতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি ছিল। এ সময় অভিভাবক ও সংস্কৃতিকর্মীরা মানববন্ধন ও মিছিল করেছে।
রোববার থেকে সারাদেশে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা করেছে।
বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রিসভার সব সদস্যের পদত্যাগের দাবিতে এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকার পদত্যাগ এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বে জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত সর্বাত্মক অসহযোগ ঘিরে সোমবার সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এসব সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ১০২ জন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৪ জন পুলিশ সদস্য ।
বাংলাদেশ সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে শেষ হাসি হাসলেন আন্দোলনকারীরা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে গণভবন ছেড়ে আপতত ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।